| |
               

মূল পাতা আরো পাঠকের কলাম কারাগারে কেমন আছেন মাওলানা মামুনুল হক? 


কারাগারে কেমন আছেন মাওলানা মামুনুল হক? 


মাওলানা এহসানুল হক     29 March, 2023     09:52 AM    


২০২১ এর এমন সময়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন মাওলানা মামুনুল হক। শুধু তিনিই নন, সারাদেশ থেকে আরও প্রায় দুই হাজার হেফাজত নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছিল। কমবেশি বছর খানেক কারা যাপনের পর প্রায় সবাই এখন মুক্ত জীবনে ফিরে এসেছেন। কিন্তু এখনো কারাগারে বন্দী আছেন মাওলানা মামুনুল হক, সাখাওয়াত হোসাইন রাজিসহ কিছু আলেমেদ্বীন। দেখতে দেখতে দুইটি বছর পার হয়ে গেলো।

এই দীর্ঘ কারাবাসে তিনি কেমন আছেন, এটা অনেকেই জানতে চান। কারো সাথে দেখা হলো এটাই থাকে প্রথম প্রশ্ন, আপনার মামা কেমন আছে? কিভাবে তার সময় কাটে? মামলা মুকদ্দমার খবর কি? আমি এই প্রশ্নের সম্মুখীন বেশি হই, কারণ আমি নিজেও হেফাজতের মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী ছিলাম।

আমি ছিলাম নারায়ণগঞ্জ কারাগারে। আর তিনি ছিলেন কাশিমপুর কারাগারে। একসাথে আমাদের থাকা হয়নি। থাকার সুযোগ দেয়নি। তবে যখনই মামার নারায়ণগঞ্জ আদালতে হাজিরা থাকতো, তখনই তিনি নারায়ণগঞ্জ কারাগারে আসতেন। কিছুদিন থাকতেন। বিশ পচিশদিনও থেকেছেন।

নারায়ণগঞ্জ কারাগারে তিনি পা রাখতেই আমার কাছে খবর চলে যেত 'আপনার মামা আসছে'। সাথে সাথে ছুটে যেতাম। দেখতাম ডাণ্ডা বেড়ি পরে ক্লান্তশ্রান্ত হয়ে আসছেন। এত কষ্টের মাঝেও আমাকে দেখলে এক অপার্থিব ভালো লাগায় চেহারাটা উজ্জ্বল হয়ে উঠতো। পরম মায়ায় আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরতেন। ক্ষণিকের জন্য ভুলে যেতাম কারাগারের দুঃখ বেদনা।

তিনি থাকতেন সেলে। রুমসঙ্গী ছিলেন মাওলানা মুনির কাসেমী ও মাওলানা আজহারুল ইসলাম। মাঝে মাঝে আতাউল্লাহ আমিন ভাইও আসতেন হাজিরার জন্য। আর আমি থাকতাম অন্য দিকে। দিনের বেলা আমাদের দেখা হতো। যখনই দেখা করতে যেতাম, দেখতাম তিনি নামাজ পড়ছেন। ইবাদত বন্দিগীতেই ডুবে থাকতেন। প্রচুর তিলাওয়াত করতেন। লম্বা কেরাতে নামাজ পড়তেন। 

কারাগারে সবাই কমবেশি ইবাদতে মশগুল হয়। আমরাও করেছি। তবে ধারাবাহিকভাবে আমল ধরে রাখা অনেক কঠিন ব্যাপার। কারণ মাঝে মাঝে মন এত খারাপ থাকে যে কিছুই করতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু তিনি এত কষ্টের মাঝেও আমল ধরে রেখেছেন। আমাকেও সব সময় আমলের ব্যাপারে তাগিত দিতেন।

কেমন আছেন জানতে চাইলে বলতেন, ভালো আছি। উল্টা আমাকেই প্রশ্ন করতেন, কেমন আছি, কি করি, সব খুটিয়ে জিজ্ঞেস করতেন। কারাগারে মানুষ আর কেমন থাকে! তার শরীর স্বাস্থ্যের কি অবস্থা সেটা আদালতে এলেই তো টের পাওয়া যায়। যারা কারাগার থেকে বের হয়েছেন তারা জানেন, এই কারা যাপনের প্রভাব শরীরে কত দিন থাকে। তবুও মুমিনের কর্তব্য এটাই সর্বাবস্থায় আলহামদুলিল্লাহ, তিনি ভালো আছেন।
অবসর সময়ে নিজেদের মধ্যে অনেক বিষয়ে আলাপ হতো। অতীতের ভুল ত্রুটি ও প্রশান্তির জায়গাগুলো স্পষ্ট হয়ে ধরা দিতো। কওমি অঙ্গনের স্থবিরতা নিয়ে আক্ষেপও ছিল। দ্বীন ইসলামের পক্ষে ভূমিকা রাখতে গিয়ে আলেমদের উপর এত বড় আঘাত এলো, এত মানুষ বন্দী হলেন, তাদের পক্ষে উলামায়ে কেরাম ঐক্যবদ্ধ কোনো ভূমিকা রাখলেন না। কিছু রাগ ক্ষোভ বা দুরত্ব  থাকতে পারে, এতদিনেও কি তা একটু কমেনি? বন্দী উলামায়ে কেরাম এর মুক্তির জন্য দলমতের উর্ধ্বে উঠে একটু ভূমিকা রাখা যায় না?

আর বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড়  প্রতিপক্ষ কি উলামায়ে কেরাম? সবচেয়ে বড় বিরোধীদলীয় নেতা কি মাওলানা মামুনুল হক? সরকারের কত প্রতিপক্ষ আছে। তারা সরকার বিরোধী রাজনীতি করছে। সরকার পতনের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা তদবির করছে, তাদের পরিনতি তো এমন হয় না। তারা গ্রেফতার হলেও সহজেই বের হয়ে আসে। কিন্তু আলেমরা কি এমন অপরাধ করেছে যে তাদের এতদিন এভাবে জেলে রাখতে হবে?

২০১৩ এর মামলা হিসাব করলে মাওলানা মামুনুল হকের মামলা সংখ্যা চল্লিশের উপরে। এখন জামিন করতে হবে প্রায় ত্রিশটি। অন্য সবার জামিন প্রক্রিয়া চলমান হলেও মাওলানা মামুনুল হকের বিষয়টি এখনো স্থবির। আইনি প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। আশায় আশায় আমাদের দিন কাটে। সহ্য সামর্থ্যের সব সীমা অতিক্রম হয়ে গেছে। এভাবে আর কতকাল? অনেক দিন তো হলো, এবার ছেড়ে দেয়া যায় না?


লেখক, মাওলানা মামুনুল হকের ভাগ্নে।